বিশেষ প্রতিবেদক :
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা শাহাদৎ বার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় বিপথগামী সৈনিকরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। দিবসটি পালন করতে বিজিবি ও সেনাবাহিনী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৪ বছরেও বিচারিক আদালতের গণ্ডি পেরোয়নি এ ঘটনার দায়ের হওয়া বিস্ফোরক মামলাটি। তবে এ ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
পিলখানা ট্র্যাজেডির ভয়াবহ নৃশংসতার পর হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আলাদা দুটি মামলার বিচার একসঙ্গে শুরু হয়। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট দু-জায়গাতেই হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এখন আপিল বিভাগে চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ের অপেক্ষা। তবে নিম্ন আদালতে ঝুলে আছে বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি। যদিও এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৪ বছর।
এ মামলায় আপিল শুনানির জন্য ফের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, দুটি মামলার মধ্যে একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অথচ অন্য কেসটি এখনো ট্রায়াল পর্যায়ে। খুব সহজেই বোঝা যায় রাষ্ট্রপক্ষে সদিচ্ছারও কোনো ঘাটতি রয়েছে। আমরা উভয় মামলা খুব দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি, করে যাচ্ছি। অনুরোধ করব, রাষ্ট্রপক্ষ যেন দুটি মামলাই দ্রুত নিষ্পত্তি করেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, এ বছর আপিল শুনানি শুরু করবে রাষ্ট্রপক্ষ। তার আশা, চলতি বছরই মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। আরও জানান, ১৩৯ জনের ফাঁসি বহালের পাশাপাশি যাদের সাজা কমানো হয়েছে, সে বিষয়েও শক্ত অবস্থান নেবে রাষ্ট্রপক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা ৩৩টি আবেদন ফাইল করেছি। আবেদন অনুযায়ী কোর্টে আসবে, তাদের সময় দেয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না হলে আপিলটি বাতিল হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে আশা করি এ বছরই মামলাটি শুনানি করতে পারব।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের নামে হত্যা করা হয় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। নৃশংস এই ঘটনায় করা দুই মামলায় আসামি রয়েছেন ৮৫০ জন। এছাড়া বাহিনীর নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলায় প্রায় ৬ হাজার জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর লালবাগে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দেওয়া হয়। ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৬৬ জনকে।
২০১৭ সালের ২৭শে নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখা হয়। আট জনের মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চার জনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ আসামি।
এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এখনো বিচারাধীন। মামলাটির আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে ২৪ জন এরই মধ্যে মারা গেছেন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন।