বিশেষ প্রতিনিধি:
বিভিন্ন এলাকায় যৌনকর্মীদের ওপর একদল যুবকের সংঘবদ্ধ শারীরিক নির্যাতন বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘সেক্সওয়ার্কারস নেটওয়ার্ক’।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘যৌনকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে চাই সরকারি হস্তক্ষেপ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করে তারা।
এসময় সংগঠনটি জানায়, বিভিন্ন এলাকায় যৌনকর্মীদের একদল যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেমন যাত্রাবাড়ী, কোর্ট এলাকায়, শ্যামলী, শহীদ মিনার, মিরপুর মাজার রোড, ফার্মগেট, আসাদগেট, উত্তরা, কুড়িল ও বাড্ডা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন যৌনকর্মীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে একাধিক যৌনকর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
গত ২৯ অগাস্ট এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওর কথা উল্লেখ করে সংগঠনটি আরও জানায়, ভিডিওতে দেখা যায় একজন যুবক শ্যামলীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের ওপর নির্বিচারে নির্মমভাবে লাঠি পেটা করে। শুধু লাঠিপেটা নয় এই ভাসমান যৌনকর্মীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ভাইরালকৃত ভিডিওটির কারণে একজন যৌন কর্মীর সন্তান ট্রমাটাইজড হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, এতে করে সন্তান ও মায়ের সম্পর্কের মাঝে তিক্ততা, টানা-পোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সেক্সওয়ার্কারস নেটওয়ার্ক সভাপতি আলেয়া আক্তার লিলি বলেন, ১৮ বছর হলে যে কোনো পেশায় যেতে পারবে। আমরা চাই স্মীকৃতি দেয়া হউক।
অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রুথেল যেগুলো ইচ্ছেদ করা হয়েছে তারা তো আর দেশের বাহিরে চলে যায়নি। তারা কোথায় যাবে? যদি তারা ব্রুথেলে থাকতো তাহলে কি অসুবিধা ছিলো? কেন তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হলো?
নতুন ব্রুথেল না চেয়ে ভাসমান কেন থাকতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে লিলি বলেন, দেশে এগারোটা ব্রুথেল আছে। সেগুলো এখনো উচ্ছেদের আতংকে থাকে। আবার নতুন করে চাওয়ার মত সেই সুযোগটাই আমাদের নেই। যেখানে পুরাতন ব্রুথেলগুলোই উচ্ছেদের মুখে সেখানে নতুন করে স্থান চাওয়ার সাহস কোথায় পাবো?
সংবাদ সম্মেলনে জানানো ১০ দফা দাবিগুলো হলো-
১. যৌন কর্মীদের ওপর নির্যাতনকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. যৌন কর্মীদের – নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং দপ্তরের কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে।
৩. স্থানীয় প্রশাসনকে স্থানীয়ভাবে যৌন কমীদের সুরক্ষা দিতে হবে।
৪. ব্রুথেল উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।
৫. পুলিশ দ্বারা যৌনকর্মীদের ওপর আইনের অপপ্রোয়গ বন্ধ করতে হবে।
৬. যৌন কর্মীদের সুস্থ, নির্বিঘ্ন, মূল স্রোতধারার পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে।
৭. যৌন কর্মীদের কবরস্থান এর জন্য কোনো পার্থক্য করা যাবে না। মূল স্রোত ধারার / সামাজিক ব্যবস্থায় কবরের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৮. যৌন কর্মীদের নির্বিঘ্ন জীবন যাপন এবং সার্বিক নিরাপত্তার প্রতি উপদেষ্টা মন্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
৯. যৌন কর্মী নয় বরং মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় নিপীড়ন এবং শোষণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০. সকল ধরনের নারী নির্যাতন এবং যৌন হয়রানী বন্ধে আইনের সঠিক বাস্থবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সেক্সওয়ার্কার নেটওয়ার্ক সাধারণ সম্পাদক নিলুফা, শাহনাজ সাবেক সভাপত, সদস্য শ্রাবন্তী, ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি ইভানা কথা, বঞ্চিত নারী সংগঠন নেত্রী রানু প্রমুখ।